১৪৩১ বঙ্গাব্দের শেষ দিন, আজ চৈত্র সংক্রান্তি

নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
১৪ এপ্রিল, ২০২৫, 2:53 AM

১৪৩১ বঙ্গাব্দের শেষ দিন, আজ চৈত্র সংক্রান্তি
বাংলা বর্ষপঞ্জিকার ১৪৩১ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসের শেষ দিন আজ। আজ চৈত্র সংক্রান্তি। সংক্রান্তি মানে হিন্দু দিনপঞ্জির মাসের শেষ দিন। চৈত্র মাসের শেষ দিনকে তাই চৈত্র সংক্রান্তি বলা হয়। আবহমান বাংলায় চিরাচরিত বিভিন্ন ঐতিহ্যকে ধারণ করে আসছে এই চৈত্র সংক্রান্তি। ঋতুরাজ বসন্তকে বিদায় জানিয়ে বাঙালির মাঝে হাজির হচ্ছে আরো একটি নতুন বছর। নতুন বছরের আগমনী সুরে বাংলা বর্ষপঞ্জিকায় সোমবার পহেলা বৈশাখ, নতুন বর্ষ- ১৪৩২। বাঙালি জাতি মেতে উঠবে বর্ষবরণ উৎসবে। নতুন দিনের নতুন বার্তা নিয়ে বৈশাখ আসবে বাঙালির ঘরে ঘরে।
বাংলা বর্ষপঞ্জিকায় বছরের শেষ দিন হিসেবে পুরাতনকে বিদায় ও নতুন বর্ষকে বরণ করার জন্য প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিকে ঘিরে থাকে বিভিন্ন আচার, অনুষ্ঠান ও উৎসবের আয়োজন। বিশেষ করে বাঙালি সনাতনীসহ, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী (গারো, হাজং, কোচ, বানাই, ডালু, মান্দাই, হদি) এ বিশেষ দিনটি নিজস্ব ধর্মীয় আচারে পালন করে আসছে। শহরের যান্ত্রিক সভ্যতায় চৈত্র সংক্রান্তির রীতি রেওয়াজ কম পালন হলেও বারহাট্টা উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে নানান ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চৈত্র সংক্রান্তি পালন হয়। মনে করা হয়, চৈত্র সংক্রান্তিকে অনুসরণ করেই পহেলা বৈশাখ উদযাপনের এত আয়োজন। তাই চৈত্র সংক্রান্তি হচ্ছে বাঙালির বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শাস্ত্র মেনে স্নান, ব্রত, উপবাস করে থাকেন। নিজ নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও নানা আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন।
এদিকে নেত্রকোনার বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এ দিনে পালন করে ‘বৈসাবি’ উৎসব। নানা আয়োজনে চলছে চৈত্র সংক্রান্তির পার্বণ আবার ঠিক একই সঙ্গে দুয়ারে কড়া নাড়ছে নতুন বছরের শুরু পহেলা বৈশাখ। বৈশাখকে বরণ করতে সবখানেই এখন চলছে সাজসাজ রব।
এ বিষয়ে বারহাট্টা উপজেলার বাউসী অর্দ্ধচন্দ্র উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (স্কুল ও কলেজ) বাংলা বিষয়ের সিনিয়র প্রভাষক বিজয় চন্দ্র দাস বলেন, ছোটবেলা থেকেই চৈত্র সংক্রান্তির দিনে সনাতন ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী এখনও আমাদের এলাকায় প্রকৃতি থেকে কুড়িয়ে আনা বিভিন্ন তেতো শাক, চৈতালি মৌসুমের সবজি, পাতা, মুড়া ইত্যাদি ও তার সঙ্গে দুপুর বেলার খাবারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ‘চৌদ্দ’ রকমের শাক এবং তার সাথে কাঁচা আম তো থাকবেই। এ দিন নিরামিষ খেয়ে চৈত্র সংক্রান্তি পালন করার রীতি প্রচলিত আছে। চৈত্র সংক্রান্তির মহিমা এখানেই। তিনি আফসোস করে বলেন, আমাদের বাপ-দাদার সময়ে যা দেখেছি, কিংবা মায়েরা যে সব শাক সবজি দিয়ে চৈত্র সংক্রান্তি করতেন, তা এখন নাই। রাস্তাঘাট হয়েছে, বড় বড় দালান কোঠা হয়েছে, তাই অনাবাদী শাক সবজি আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, লোক প্রথা অনুযায়ী, চৈত্র সংক্রান্তিতে বিশেষ খাবার ছাতু, চিড়া, দই, মুড়ি, খই, তিল ও নারিকেলের নাড়ু ইত্যাদি খেতে হবে। অথচ কালের বিবর্তনে বাঙালি সনাতনীদের এসব খাবারের আর দেখা মিলে না।
বারহাট্টা উপজেলা সদরের পুরোহিত রুপক চক্রবর্তীর সাথে কথা বললে চৈত্র সংক্রান্তি সম্পর্কে তিনি জানান, লোক কথা অনুযায়ী, বাংলা পঞ্জিকার চৈত্র মাসের নামকরণ করা হয়েছিল ‘চিত্রা’ নক্ষত্র হতে। আদি গ্রন্থ পুরাণে আছে, সাতাশটি নক্ষত্রের নামে প্রজাপতি দক্ষ রাজ সুন্দরী কন্যাদের নামকরণ করেছিলেন। তার দুই কন্যার নাম যথাক্রমে চিত্রা ও বিশাখা। এক মাস ব্যবধানে জন্ম বলে এই দুই কন্যার নাম থেকে জন্ম নিল বাংলা দুই মাস- চিত্রার নামানুসারে চৈত্র আর বিশাখার নামানুসারে বৈশাখ। চৈত্রের শেষ আর বৈশাখের শুরু। সনাতন ধর্মালম্বী বাঙালির সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব পালিত হয় এই দুই দিনে।
বারহাট্টা উপজেলা সদরের গড়মা গ্রামে ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা করতে আসা তান্ত্রিক কালিদাস জানান, এই গ্রামে প্রতি বছরেই চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন চৈত্র সংক্রান্তির প্রধান উৎসব চড়ক পূজা। চড়ক গাজন উৎসবের একটি প্রধান অঙ্গ। নীলষষ্ঠীর পরের দিনই হয় চড়ক উৎসব। তাই অনেকেই একে শিবের গাজনের অঙ্গ হিসেবেই বিবেচনা করেন। এ উপলক্ষে গ্রামের শিবতলা থেকে শোভাযাত্রা শুরু করে অন্য গ্রামের শিবতলায় নিয়ে যাওয়া হয়।
চৈত্র সংক্রান্তির মাধ্যমে পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরের সূচনায় সফলতা ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশায় দেখা দেবে নতুন ভোর। পুরনো বছরের সব জরাজীর্ণতা মুছে ফেলে নববর্ষে বাঙালি মিলিত হবে পহেলা বৈশাখের সর্বজনীন উৎসবে।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
১৪ এপ্রিল, ২০২৫, 2:53 AM

বাংলা বর্ষপঞ্জিকার ১৪৩১ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসের শেষ দিন আজ। আজ চৈত্র সংক্রান্তি। সংক্রান্তি মানে হিন্দু দিনপঞ্জির মাসের শেষ দিন। চৈত্র মাসের শেষ দিনকে তাই চৈত্র সংক্রান্তি বলা হয়। আবহমান বাংলায় চিরাচরিত বিভিন্ন ঐতিহ্যকে ধারণ করে আসছে এই চৈত্র সংক্রান্তি। ঋতুরাজ বসন্তকে বিদায় জানিয়ে বাঙালির মাঝে হাজির হচ্ছে আরো একটি নতুন বছর। নতুন বছরের আগমনী সুরে বাংলা বর্ষপঞ্জিকায় সোমবার পহেলা বৈশাখ, নতুন বর্ষ- ১৪৩২। বাঙালি জাতি মেতে উঠবে বর্ষবরণ উৎসবে। নতুন দিনের নতুন বার্তা নিয়ে বৈশাখ আসবে বাঙালির ঘরে ঘরে।
বাংলা বর্ষপঞ্জিকায় বছরের শেষ দিন হিসেবে পুরাতনকে বিদায় ও নতুন বর্ষকে বরণ করার জন্য প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিকে ঘিরে থাকে বিভিন্ন আচার, অনুষ্ঠান ও উৎসবের আয়োজন। বিশেষ করে বাঙালি সনাতনীসহ, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী (গারো, হাজং, কোচ, বানাই, ডালু, মান্দাই, হদি) এ বিশেষ দিনটি নিজস্ব ধর্মীয় আচারে পালন করে আসছে। শহরের যান্ত্রিক সভ্যতায় চৈত্র সংক্রান্তির রীতি রেওয়াজ কম পালন হলেও বারহাট্টা উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে নানান ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চৈত্র সংক্রান্তি পালন হয়। মনে করা হয়, চৈত্র সংক্রান্তিকে অনুসরণ করেই পহেলা বৈশাখ উদযাপনের এত আয়োজন। তাই চৈত্র সংক্রান্তি হচ্ছে বাঙালির বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শাস্ত্র মেনে স্নান, ব্রত, উপবাস করে থাকেন। নিজ নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও নানা আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন।
এদিকে নেত্রকোনার বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এ দিনে পালন করে ‘বৈসাবি’ উৎসব। নানা আয়োজনে চলছে চৈত্র সংক্রান্তির পার্বণ আবার ঠিক একই সঙ্গে দুয়ারে কড়া নাড়ছে নতুন বছরের শুরু পহেলা বৈশাখ। বৈশাখকে বরণ করতে সবখানেই এখন চলছে সাজসাজ রব।
এ বিষয়ে বারহাট্টা উপজেলার বাউসী অর্দ্ধচন্দ্র উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (স্কুল ও কলেজ) বাংলা বিষয়ের সিনিয়র প্রভাষক বিজয় চন্দ্র দাস বলেন, ছোটবেলা থেকেই চৈত্র সংক্রান্তির দিনে সনাতন ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী এখনও আমাদের এলাকায় প্রকৃতি থেকে কুড়িয়ে আনা বিভিন্ন তেতো শাক, চৈতালি মৌসুমের সবজি, পাতা, মুড়া ইত্যাদি ও তার সঙ্গে দুপুর বেলার খাবারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ‘চৌদ্দ’ রকমের শাক এবং তার সাথে কাঁচা আম তো থাকবেই। এ দিন নিরামিষ খেয়ে চৈত্র সংক্রান্তি পালন করার রীতি প্রচলিত আছে। চৈত্র সংক্রান্তির মহিমা এখানেই। তিনি আফসোস করে বলেন, আমাদের বাপ-দাদার সময়ে যা দেখেছি, কিংবা মায়েরা যে সব শাক সবজি দিয়ে চৈত্র সংক্রান্তি করতেন, তা এখন নাই। রাস্তাঘাট হয়েছে, বড় বড় দালান কোঠা হয়েছে, তাই অনাবাদী শাক সবজি আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, লোক প্রথা অনুযায়ী, চৈত্র সংক্রান্তিতে বিশেষ খাবার ছাতু, চিড়া, দই, মুড়ি, খই, তিল ও নারিকেলের নাড়ু ইত্যাদি খেতে হবে। অথচ কালের বিবর্তনে বাঙালি সনাতনীদের এসব খাবারের আর দেখা মিলে না।
বারহাট্টা উপজেলা সদরের পুরোহিত রুপক চক্রবর্তীর সাথে কথা বললে চৈত্র সংক্রান্তি সম্পর্কে তিনি জানান, লোক কথা অনুযায়ী, বাংলা পঞ্জিকার চৈত্র মাসের নামকরণ করা হয়েছিল ‘চিত্রা’ নক্ষত্র হতে। আদি গ্রন্থ পুরাণে আছে, সাতাশটি নক্ষত্রের নামে প্রজাপতি দক্ষ রাজ সুন্দরী কন্যাদের নামকরণ করেছিলেন। তার দুই কন্যার নাম যথাক্রমে চিত্রা ও বিশাখা। এক মাস ব্যবধানে জন্ম বলে এই দুই কন্যার নাম থেকে জন্ম নিল বাংলা দুই মাস- চিত্রার নামানুসারে চৈত্র আর বিশাখার নামানুসারে বৈশাখ। চৈত্রের শেষ আর বৈশাখের শুরু। সনাতন ধর্মালম্বী বাঙালির সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব পালিত হয় এই দুই দিনে।
বারহাট্টা উপজেলা সদরের গড়মা গ্রামে ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা করতে আসা তান্ত্রিক কালিদাস জানান, এই গ্রামে প্রতি বছরেই চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন চৈত্র সংক্রান্তির প্রধান উৎসব চড়ক পূজা। চড়ক গাজন উৎসবের একটি প্রধান অঙ্গ। নীলষষ্ঠীর পরের দিনই হয় চড়ক উৎসব। তাই অনেকেই একে শিবের গাজনের অঙ্গ হিসেবেই বিবেচনা করেন। এ উপলক্ষে গ্রামের শিবতলা থেকে শোভাযাত্রা শুরু করে অন্য গ্রামের শিবতলায় নিয়ে যাওয়া হয়।
চৈত্র সংক্রান্তির মাধ্যমে পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরের সূচনায় সফলতা ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশায় দেখা দেবে নতুন ভোর। পুরনো বছরের সব জরাজীর্ণতা মুছে ফেলে নববর্ষে বাঙালি মিলিত হবে পহেলা বৈশাখের সর্বজনীন উৎসবে।