বিরল রোগে আক্রান্ত মা-ছেলে, সাহায্যের আবেদন
রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
১৪ নভেম্বর, ২০২৫, 8:09 PM
বিরল রোগে আক্রান্ত মা-ছেলে, সাহায্যের আবেদন
এক বিরল ও ভয়াবহ টিউমারে আক্রান্ত নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার অতিথপুর গ্রামের জরাজীর্ণ কুঁড়েঘরের এককোণে বসবাস করা অসহায় হতদরিদ্র পরিবারের ছেলে কাজল মিয়া (২২) ও মা শাহানা খাতুন (৪৫)। বিরল টিউমার ধীরে ধীরে কেড়ে নিচ্ছে তাঁদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষমতা। সুন্দরের প্রতিচ্ছবি যে মুখ, সেই মুখই এখন কাজলের জীবনে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জন্মের সময় কাজলের মুখে ছিল ছোট একটি টিউমার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি এখন বড় হয়ে তাঁর এক চোখ ও মুখ পুরোপুরি ঢেকে ফেলেছে। মুখের নিচে ঝুলে পড়েছে বিশাল মাংসপিণ্ড। খাওয়া-দাওয়া করতে কষ্ট হয়, এক চোখে দেখতে পান না। বিকৃত চেহারার কারণে এখন গ্রামের লোকেরা তাঁর সঙ্গে মিশতেও চায় না, একাকিত্ব যেন তাঁর জীবনের নিত্যসঙ্গী। শুধু কাজল নন, তাঁর মা শাহানা খাতুনও একই রোগে ভুগছেন। গালের পাশ থেকে ঝুলে পড়েছে টিউমার, যা বুক পর্যন্ত বিস্তৃত। শরীরের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গুটি।
দু’জনকে নিয়ে দিশেহারা দিনমজুর বাবা মিরাজ আলী। সামান্য মজুরির টাকায় সংসার চালাতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে এই ভয়াবহ রোগের চিকিৎসা করানো তাঁর পক্ষে কল্পনাতীত। দারিদ্র্য আর সমাজের অবহেলায় আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে পরিবারটি।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মিরাজ আলীর স্ত্রী শাহানার মুখে বিয়ের আগে থেকেই ছোট টিউমার ছিল। শরীরে ছিল ছোট ছোট গুটি টিউমার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই টিউমার বড় হয়ে ঝুলে পড়েছে। বর্তমানে শরীরজুড়ে দেখা দিয়েছে অসংখ্য টিউমার। দুই ছেলে আর এক মেয়ের মধ্যে মেজ ছেলে কাজলের মুখে শুধু এমন টিউমার দেখা দিয়েছে। অন্যদের শরীরে কোনো টিউমার নেই।
বিরল রোগে আক্রান্ত ভুক্তভোগী কাজল মিয়া বলেন, ‘ছোটবেলায় আমার কপালের কাছে ছোট একটা টিউমার হয়েছিল। সেটা বড় হতে হতে এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। এক চোখ টিউমারে ঢেকে যাওয়ায় সেই চোখে আর দেখতে পাই না। মুখ ঢেকে যাওয়ায় কথা বলতে ও খাবার খেতে কষ্ট হয়। এই অবস্থায় কোনো কাজকর্ম করতে পারি না। তাই মানুষের কাছে হাত পেতে যা পাই, তা দিয়ে চলি। টিউমার ভালো হলে কাজ করেই খেতে পারতাম। আমার খুব ইচ্ছা হয় স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে। এমন জটিল রোগ হওয়ায় এলাকার কোনো মানুষ আমার সঙ্গে মেশে না। একাই আমাকেচলতে হয়।‘
কাজলের মা শাহানা খাতুন আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার দিন তো শেষের দিকে। ছেলেটার তো সামনে সারাজীবন পড়ে রয়েছে। এমন রোগ নিয়ে বাকি জীবন কেমনে কাটাবে। এভাবে টিউমার বাড়তে থাকলে কী করবো? জটিল রোগের চিকিৎসা করানোর মতো সাধ্য আমাদের নেই। সরকারি সহায়তায় চিকিৎসা পেলে সে হয়তো স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেত।‘
দিনমজুর বাবা মিরাজ আলী বলেন, ‘ছেলে আর স্ত্রী দু'জনেই অসুস্থ। আমি গরিব মানুষ, কেমন করে ওদের চিকিৎসা করাব বুঝতে পারছি না। মানুষের কাছে চেয়েচিন্তে যা পাই তা দিয়েই সংসার চলে। তাদের নিয়ে কী করব একমাত্র আল্লাই জানেন।‘
প্রতিবেশী জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ওদের অবস্থা খুব খারাপ। সরকারি সাহায্য পেলে হয়তো চিকিৎসা সম্ভব হতো। আমাদের সবার উচিত ওদের পাশে দাঁড়ানো।‘
বারহাট্টা গোপালপুর বাজারের ঔষধ বিক্রেতা মানিক সরকার বলেন, ছেলেটি প্রায়ই বাজারে মানুষের কাছে সাহায্য চায়। আমার কাছেও সাহায্য নেয়। ছেলেটার এমন দুর্ভোগ দেখে আমার খুব কষ্ট হয়। আমি সমাজের সচেতন মহলকে অসহায় ছেলেটির প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে অনুরোধ জানাচ্ছি।
রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
১৪ নভেম্বর, ২০২৫, 8:09 PM
এক বিরল ও ভয়াবহ টিউমারে আক্রান্ত নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার অতিথপুর গ্রামের জরাজীর্ণ কুঁড়েঘরের এককোণে বসবাস করা অসহায় হতদরিদ্র পরিবারের ছেলে কাজল মিয়া (২২) ও মা শাহানা খাতুন (৪৫)। বিরল টিউমার ধীরে ধীরে কেড়ে নিচ্ছে তাঁদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষমতা। সুন্দরের প্রতিচ্ছবি যে মুখ, সেই মুখই এখন কাজলের জীবনে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জন্মের সময় কাজলের মুখে ছিল ছোট একটি টিউমার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি এখন বড় হয়ে তাঁর এক চোখ ও মুখ পুরোপুরি ঢেকে ফেলেছে। মুখের নিচে ঝুলে পড়েছে বিশাল মাংসপিণ্ড। খাওয়া-দাওয়া করতে কষ্ট হয়, এক চোখে দেখতে পান না। বিকৃত চেহারার কারণে এখন গ্রামের লোকেরা তাঁর সঙ্গে মিশতেও চায় না, একাকিত্ব যেন তাঁর জীবনের নিত্যসঙ্গী। শুধু কাজল নন, তাঁর মা শাহানা খাতুনও একই রোগে ভুগছেন। গালের পাশ থেকে ঝুলে পড়েছে টিউমার, যা বুক পর্যন্ত বিস্তৃত। শরীরের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গুটি।
দু’জনকে নিয়ে দিশেহারা দিনমজুর বাবা মিরাজ আলী। সামান্য মজুরির টাকায় সংসার চালাতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে এই ভয়াবহ রোগের চিকিৎসা করানো তাঁর পক্ষে কল্পনাতীত। দারিদ্র্য আর সমাজের অবহেলায় আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে পরিবারটি।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মিরাজ আলীর স্ত্রী শাহানার মুখে বিয়ের আগে থেকেই ছোট টিউমার ছিল। শরীরে ছিল ছোট ছোট গুটি টিউমার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই টিউমার বড় হয়ে ঝুলে পড়েছে। বর্তমানে শরীরজুড়ে দেখা দিয়েছে অসংখ্য টিউমার। দুই ছেলে আর এক মেয়ের মধ্যে মেজ ছেলে কাজলের মুখে শুধু এমন টিউমার দেখা দিয়েছে। অন্যদের শরীরে কোনো টিউমার নেই।
বিরল রোগে আক্রান্ত ভুক্তভোগী কাজল মিয়া বলেন, ‘ছোটবেলায় আমার কপালের কাছে ছোট একটা টিউমার হয়েছিল। সেটা বড় হতে হতে এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। এক চোখ টিউমারে ঢেকে যাওয়ায় সেই চোখে আর দেখতে পাই না। মুখ ঢেকে যাওয়ায় কথা বলতে ও খাবার খেতে কষ্ট হয়। এই অবস্থায় কোনো কাজকর্ম করতে পারি না। তাই মানুষের কাছে হাত পেতে যা পাই, তা দিয়ে চলি। টিউমার ভালো হলে কাজ করেই খেতে পারতাম। আমার খুব ইচ্ছা হয় স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে। এমন জটিল রোগ হওয়ায় এলাকার কোনো মানুষ আমার সঙ্গে মেশে না। একাই আমাকেচলতে হয়।‘
কাজলের মা শাহানা খাতুন আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার দিন তো শেষের দিকে। ছেলেটার তো সামনে সারাজীবন পড়ে রয়েছে। এমন রোগ নিয়ে বাকি জীবন কেমনে কাটাবে। এভাবে টিউমার বাড়তে থাকলে কী করবো? জটিল রোগের চিকিৎসা করানোর মতো সাধ্য আমাদের নেই। সরকারি সহায়তায় চিকিৎসা পেলে সে হয়তো স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেত।‘
দিনমজুর বাবা মিরাজ আলী বলেন, ‘ছেলে আর স্ত্রী দু'জনেই অসুস্থ। আমি গরিব মানুষ, কেমন করে ওদের চিকিৎসা করাব বুঝতে পারছি না। মানুষের কাছে চেয়েচিন্তে যা পাই তা দিয়েই সংসার চলে। তাদের নিয়ে কী করব একমাত্র আল্লাই জানেন।‘
প্রতিবেশী জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ওদের অবস্থা খুব খারাপ। সরকারি সাহায্য পেলে হয়তো চিকিৎসা সম্ভব হতো। আমাদের সবার উচিত ওদের পাশে দাঁড়ানো।‘
বারহাট্টা গোপালপুর বাজারের ঔষধ বিক্রেতা মানিক সরকার বলেন, ছেলেটি প্রায়ই বাজারে মানুষের কাছে সাহায্য চায়। আমার কাছেও সাহায্য নেয়। ছেলেটার এমন দুর্ভোগ দেখে আমার খুব কষ্ট হয়। আমি সমাজের সচেতন মহলকে অসহায় ছেলেটির প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে অনুরোধ জানাচ্ছি।