শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে শিশিরস্নাত ভোর
রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
১৪ নভেম্বর, ২০২৫, 7:38 PM
শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে শিশিরস্নাত ভোর
হেমন্ত প্রেমী রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের লেখায়- 'প্রথম ফসল গেছে ঘরে হেমন্তের মাঠে মাঠে ঝরে শুধু শিশিরের জল।' ষড়ঋতুর বাংলায় ঋতুর পালা বদলে কার্তিক-অগ্রহায়ণ দুই মাস হেমন্তকাল। হেমন্ত মানেই শিশিরস্নাত প্রহর। রাতের ঘন কুয়াশা ও ভোরে ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। হেমন্তের জয়গানে উত্তরের হিমেল হাওয়া আর ভোরের স্নিগ্ধ-কোমল ধূসর কুয়াশার আবহে শীতের আগাম বার্তা বইছে বারহাট্টার প্রকৃতি জুড়ে।
আশ্বিনের মন্দমধুর হাওয়া, নদীর তীরে ঢেউ খেলা কাশগুচ্ছ আর সাদা মেঘের ভেলায় ভাসতে ভাসতে শরৎ পেরিয়ে প্রকৃতিতে হেমন্তকাল চলে এসেছে নীরবে। বাতাসে শীতের হিম হিম স্পর্শ। প্রকৃতিতে কুয়াশার আঁচল সরিয়ে শিশির বিন্দু মুক্তো দানার মতো দ্যুতি ছড়াতে শুরু করেছে। গাছে গাছে ফুটেছে শিউলি, কামিনী আর ছাতিম ফুল। ছাতিম, শিউলি আর কামিনীর চিরচেনা মিষ্টি ঘ্রাণ প্রকৃতিতে জানান দিচ্ছে শীতের বারতা। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ 'আবার আসিব ফিরে, ধানসিঁড়িটির তীরে, এই বাংলায়, কার্তিকের নবান্নের দেশে কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এই কাঁঠাল ছায়ায়।' কবিতায় ফিরে আসতে চেয়েছেন রূপসী বাংলার হেমন্তের কার্তিকে। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হেমন্তের বন্দনা করে লিখেছেন- 'আজি হেমন্তের শান্তি ব্যাপ্ত চরাচরে, জনশূন্য ক্ষেত্র-মাঝে দীপ্ত দ্বিপ্রহরে- শব্দহীন গতিহীন স্তব্ধতা উদার/ রয়েছে পড়িয়া শ্রান্ত দিগন্ত প্রসার/ স্বর্ণশ্যাম ডানা মেলি...।' হেমন্তকে চেনা যায় তার 'স্বর্ণশ্যাম' রঙের বিভা এবং ভোরের শিশিরে। ঋতুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অনুভূতিকে তুলে ধরে কবি নজরুলের গানে তুলে ধরেছেন হেমন্তের সৌন্দর্য- 'সবুজ শোভার ঢেউ খেলে যায়/নবীন আমন ধানের ক্ষেতে। হেমন্তের ঐ শিশির-নাওয়া হিমেল হাওয়া/সেই নাচনে উঠলো মেতে।' কার্তিক মাসের শেষ সপ্তাহেই প্রকৃতিতে দেখা মিলেছে ঘনকুয়াশা। এরই সাথে সাথে বিদায় নিচ্ছে মৌসুমি বায়ু, আগমন ঘটছে উত্তরের হিমবায়ুর। সেই সাথে পড়ন্ত বিকেল থেকে শুরু হয় মৃদু হিমেল হাওয়া, রাত ভারি হওয়ার সাথে সাথে গাছের পাতায় শিশির বিন্দু জমে টুপটাপ শব্দে ঝরে পড়ে কুয়াশা। ভোর থেকে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে গ্রামাঞ্চলের পথ-ঘাট, দীগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ, সবুজ প্রকৃতি। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সবুজ ঘাসের বুকে মুক্ত দানায় ঝিকমিক করে উঠা শিশিরবিন্দু দিয়ে যায় শীতের আগমনী বার্তা।
কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে সরেজমিনে জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার গ্রামীণ প্রকৃতি ঘুরে দেখাগেছে, ভোরের ঘন কুয়াশা আর দিগন্ত জুড়া মাঠে কাঁচা-পাকা ধানের ঢেউ যেন পুরো প্রকৃতিকে করে তুলেছে আরও স্নিগ্ধ। বাড়ির উঠানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিউলি ফুলের গন্ধ নির্মল করছে গ্রামীণ পরিবেশ। পথের ধারে পাখির কিচিরমিচির শব্দে ভরে উঠছে হেমন্তের সকাল।
জেলা সদরসহ কয়েকটি কয়েকটি উপজেলার লোকজনের সাথে কথা বললে তারা সকালের সময়কে বলেন, আবহমান বাংলার সবুজ-শ্যামল প্রকৃতিতে আবারও শুরু হয়েছে ঋতুর পালাবদল। ছয়ঋতুর বঙ্গাব্দ বর্ষপঞ্জিতে এখন চলেছে কার্তিক মাস। এরই মধ্যে কয়েকদিন ধরে ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে বারহাট্টার আশপাশের গ্রামীণ জনপদগুলো। ভোরের হালকা শীত আর ঠাণ্ডা হাওয়া মনে করিয়ে দিচ্ছে, শীত আসতে দেরি নেই। দিনের বেলা রোদে তাপ থাকলেও সন্ধ্যা নামলেই শীতের মাত্রা বাড়ছে। বিশেষ করে মধ্যরাতের পর হালকা শীত অনুভূত হচ্ছে। সকালের শিশির ভেজা ঘাস আর ঘন কুয়াশায় প্রকৃতিতে বেজে উঠেছে শীতের আগমনী বার্তা।
এদিকে শীত আসি আসি করছে। এ সময়ে জেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় শীতকালীন সবজি চাষ শুরু হয়েছে। শিম, লালশাক, টমেটো, লাউ, ফুলকপি, বাধাঁকপিসহ নানা ধরনের সবজির বীজ বপন শুরু করেছেন কৃষকরা। গ্রামবাংলার সরল-সাদামাটা মানুষেরা বলছেন, অপ্রাপ্তি আর দুঃখ-বেদনা যতই থাকুক, হেমন্ত এলে প্রকৃতির মতোই তাদের জীবনেও নেমে আসে এক শীতলতা, এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি তৈরি করে হৃদয়ে।
সকালে হাঁটতে বের হওয়া দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রতিনিধি শ্যামলেন্দু পাল ও দৈনিক কালেরকন্ঠ পত্রিকার প্রতিনিধি ফেরদৌস আহমেদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সন্ধ্যার পর থেকে ঠান্ডা নামছে। আর এই সময়ে হালকা গরম কাপড় পড়তে হচ্ছে। তবে রাত ও সকালে ঠান্ডা লাগলেও দিনের বেলায় গরম পড়ছে। পরিবেশ ও প্রকৃতির পরিবর্তন এনে দেয় শীতের আগমনী বার্তায় এক অন্য রকম অনুভূতি।
পৌরশহরের সাতপাই এলাকার অটোরিকশা চালক রিপন মিয়া, বারহাট্টা গোপালপুর এলাকার রিকশা চালক মৌজ আলী বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সন্ধ্যার পর রাস্তায় কুয়াশা ও শীত অনুভব হয়। রাত যত বাড়ে শীতের অনুভুতিও তত বেশি দেখা যায়। শীতের কারণে ঠাণ্ডা লাগায় রাত সাড়ে ১০টার পর আর বাইরে থাকি না। বাড়িতে চলে আসি। কুয়াশার কারণে হেড লাইটের আলোতে রাস্তা দেখতে কষ্ট হয়।
আবহাওয়ার পরিবর্তন নিয়ে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা সতর্ক করেন সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে। তাদের মতে, এই সময়ে ঠান্ডা-গরমের ওঠা-নামার কারণে সর্দি-কাশি ও শীতজনিত রোগ বাড়তে পারে। তাই শিশুসহ সব বয়সি মানুষের সচেতন থাকতে হবে।
রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
১৪ নভেম্বর, ২০২৫, 7:38 PM
হেমন্ত প্রেমী রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের লেখায়- 'প্রথম ফসল গেছে ঘরে হেমন্তের মাঠে মাঠে ঝরে শুধু শিশিরের জল।' ষড়ঋতুর বাংলায় ঋতুর পালা বদলে কার্তিক-অগ্রহায়ণ দুই মাস হেমন্তকাল। হেমন্ত মানেই শিশিরস্নাত প্রহর। রাতের ঘন কুয়াশা ও ভোরে ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। হেমন্তের জয়গানে উত্তরের হিমেল হাওয়া আর ভোরের স্নিগ্ধ-কোমল ধূসর কুয়াশার আবহে শীতের আগাম বার্তা বইছে বারহাট্টার প্রকৃতি জুড়ে।
আশ্বিনের মন্দমধুর হাওয়া, নদীর তীরে ঢেউ খেলা কাশগুচ্ছ আর সাদা মেঘের ভেলায় ভাসতে ভাসতে শরৎ পেরিয়ে প্রকৃতিতে হেমন্তকাল চলে এসেছে নীরবে। বাতাসে শীতের হিম হিম স্পর্শ। প্রকৃতিতে কুয়াশার আঁচল সরিয়ে শিশির বিন্দু মুক্তো দানার মতো দ্যুতি ছড়াতে শুরু করেছে। গাছে গাছে ফুটেছে শিউলি, কামিনী আর ছাতিম ফুল। ছাতিম, শিউলি আর কামিনীর চিরচেনা মিষ্টি ঘ্রাণ প্রকৃতিতে জানান দিচ্ছে শীতের বারতা। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ 'আবার আসিব ফিরে, ধানসিঁড়িটির তীরে, এই বাংলায়, কার্তিকের নবান্নের দেশে কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এই কাঁঠাল ছায়ায়।' কবিতায় ফিরে আসতে চেয়েছেন রূপসী বাংলার হেমন্তের কার্তিকে। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হেমন্তের বন্দনা করে লিখেছেন- 'আজি হেমন্তের শান্তি ব্যাপ্ত চরাচরে, জনশূন্য ক্ষেত্র-মাঝে দীপ্ত দ্বিপ্রহরে- শব্দহীন গতিহীন স্তব্ধতা উদার/ রয়েছে পড়িয়া শ্রান্ত দিগন্ত প্রসার/ স্বর্ণশ্যাম ডানা মেলি...।' হেমন্তকে চেনা যায় তার 'স্বর্ণশ্যাম' রঙের বিভা এবং ভোরের শিশিরে। ঋতুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অনুভূতিকে তুলে ধরে কবি নজরুলের গানে তুলে ধরেছেন হেমন্তের সৌন্দর্য- 'সবুজ শোভার ঢেউ খেলে যায়/নবীন আমন ধানের ক্ষেতে। হেমন্তের ঐ শিশির-নাওয়া হিমেল হাওয়া/সেই নাচনে উঠলো মেতে।' কার্তিক মাসের শেষ সপ্তাহেই প্রকৃতিতে দেখা মিলেছে ঘনকুয়াশা। এরই সাথে সাথে বিদায় নিচ্ছে মৌসুমি বায়ু, আগমন ঘটছে উত্তরের হিমবায়ুর। সেই সাথে পড়ন্ত বিকেল থেকে শুরু হয় মৃদু হিমেল হাওয়া, রাত ভারি হওয়ার সাথে সাথে গাছের পাতায় শিশির বিন্দু জমে টুপটাপ শব্দে ঝরে পড়ে কুয়াশা। ভোর থেকে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে গ্রামাঞ্চলের পথ-ঘাট, দীগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ, সবুজ প্রকৃতি। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সবুজ ঘাসের বুকে মুক্ত দানায় ঝিকমিক করে উঠা শিশিরবিন্দু দিয়ে যায় শীতের আগমনী বার্তা।
কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে সরেজমিনে জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার গ্রামীণ প্রকৃতি ঘুরে দেখাগেছে, ভোরের ঘন কুয়াশা আর দিগন্ত জুড়া মাঠে কাঁচা-পাকা ধানের ঢেউ যেন পুরো প্রকৃতিকে করে তুলেছে আরও স্নিগ্ধ। বাড়ির উঠানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিউলি ফুলের গন্ধ নির্মল করছে গ্রামীণ পরিবেশ। পথের ধারে পাখির কিচিরমিচির শব্দে ভরে উঠছে হেমন্তের সকাল।
জেলা সদরসহ কয়েকটি কয়েকটি উপজেলার লোকজনের সাথে কথা বললে তারা সকালের সময়কে বলেন, আবহমান বাংলার সবুজ-শ্যামল প্রকৃতিতে আবারও শুরু হয়েছে ঋতুর পালাবদল। ছয়ঋতুর বঙ্গাব্দ বর্ষপঞ্জিতে এখন চলেছে কার্তিক মাস। এরই মধ্যে কয়েকদিন ধরে ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে বারহাট্টার আশপাশের গ্রামীণ জনপদগুলো। ভোরের হালকা শীত আর ঠাণ্ডা হাওয়া মনে করিয়ে দিচ্ছে, শীত আসতে দেরি নেই। দিনের বেলা রোদে তাপ থাকলেও সন্ধ্যা নামলেই শীতের মাত্রা বাড়ছে। বিশেষ করে মধ্যরাতের পর হালকা শীত অনুভূত হচ্ছে। সকালের শিশির ভেজা ঘাস আর ঘন কুয়াশায় প্রকৃতিতে বেজে উঠেছে শীতের আগমনী বার্তা।
এদিকে শীত আসি আসি করছে। এ সময়ে জেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় শীতকালীন সবজি চাষ শুরু হয়েছে। শিম, লালশাক, টমেটো, লাউ, ফুলকপি, বাধাঁকপিসহ নানা ধরনের সবজির বীজ বপন শুরু করেছেন কৃষকরা। গ্রামবাংলার সরল-সাদামাটা মানুষেরা বলছেন, অপ্রাপ্তি আর দুঃখ-বেদনা যতই থাকুক, হেমন্ত এলে প্রকৃতির মতোই তাদের জীবনেও নেমে আসে এক শীতলতা, এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি তৈরি করে হৃদয়ে।
সকালে হাঁটতে বের হওয়া দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রতিনিধি শ্যামলেন্দু পাল ও দৈনিক কালেরকন্ঠ পত্রিকার প্রতিনিধি ফেরদৌস আহমেদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সন্ধ্যার পর থেকে ঠান্ডা নামছে। আর এই সময়ে হালকা গরম কাপড় পড়তে হচ্ছে। তবে রাত ও সকালে ঠান্ডা লাগলেও দিনের বেলায় গরম পড়ছে। পরিবেশ ও প্রকৃতির পরিবর্তন এনে দেয় শীতের আগমনী বার্তায় এক অন্য রকম অনুভূতি।
পৌরশহরের সাতপাই এলাকার অটোরিকশা চালক রিপন মিয়া, বারহাট্টা গোপালপুর এলাকার রিকশা চালক মৌজ আলী বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সন্ধ্যার পর রাস্তায় কুয়াশা ও শীত অনুভব হয়। রাত যত বাড়ে শীতের অনুভুতিও তত বেশি দেখা যায়। শীতের কারণে ঠাণ্ডা লাগায় রাত সাড়ে ১০টার পর আর বাইরে থাকি না। বাড়িতে চলে আসি। কুয়াশার কারণে হেড লাইটের আলোতে রাস্তা দেখতে কষ্ট হয়।
আবহাওয়ার পরিবর্তন নিয়ে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা সতর্ক করেন সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে। তাদের মতে, এই সময়ে ঠান্ডা-গরমের ওঠা-নামার কারণে সর্দি-কাশি ও শীতজনিত রোগ বাড়তে পারে। তাই শিশুসহ সব বয়সি মানুষের সচেতন থাকতে হবে।